কক্সবাজারে একদিনে ৭ জনের অস্বাভাবিক মৃত্যু

ডেস্ক রিপোর্ট – কক্সবাজার জেলায় একই দিনে পৃথক পৃথক ঘটনায় ৩ শিশু সহ ৭ জনের অস্বাভাবিক মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে ।এর মধ্যে উখিয়া ও টেকনাফে বন্দুকযুদ্ধে ৩ জন,মহেশখালীতে বজ্রপাতে ২ শিশু,চকরিয়ায় পানিতে ডুবে শিশু শিক্ষার্থ এবং সদরে বিদ্যূৎস্পৃষ্টে এক শ্রমিক সহ মোট ৭ জনের অস্বাভাবিক মৃত্যূ হয়। এদের সকলককে আশংকাজনক অবস্থায় জেলার বিভিন্ন স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স আনা হলে চিকিৎসক তাদের মৃত্যু বলে ঘোষনা করেন।৫ আগস্ট সোমবার এ ঘটনা ঘটে।

স্থানীয় সূত্রগুলো জানায়,৫ আগষ্ঠ (সোমবার) ভোররাতে টেকনাফে সীমান্ত রক্ষী বিজিবি জওয়ানদের সাথে বন্দুকযুদ্ধে রোহিঙ্গাসহ দুই মাদক পাচারকারী গুলিবিদ্ধ হয়ে হাসপাতালে নিহত হয়েছে।

নিহতরা উপজেলার হোয়াইক্যং নয়াবাজারের জলিল আহমদের পুত্র দেলোয়ার হোছন (৩০) এবং উখিয়া উপজেলার কুতুপালং শরণার্থী ক্যাম্প-২ এর রোহিঙ্গা নাগরিক মৃত হায়দার শরীফের পুত্র নুরুল ইসলাম (২৭) বলে জানা গেছে।

এসময় ৪জন বিজিবি জওয়ান আহত হয় এবং ঘটনাস্থল হতে অস্ত্র, ইয়াবা ও কিরিচ উদ্ধার করা হয়।

এই ব্যাপারে টেকনাফ ২বিজিবি ব্যাটালিয়নের উপাধিনায়ক মেজর মোঃ শরীফুল ইসলাম জোমাদ্দার হতাহতের সত্যতা স্বীকার করে বলেন, মাদক উদ্ধার অভিযান ও বন্দুকযুদ্ধের ঘটনায় ২ জন নিহত হয়েছে। এই ব্যাপারে তদন্ত স্বাপেক্ষে মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে।

একইদিন সোমবার ভোরে উখিয়ার জালিয়া পালং ইউনিয়নের রুপপতি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সন্নিকটে মেরিন ড্রাইভ সড়ক নামক স্থানে চোরাচালান বিরোধী অভিযানের অংশ হিসেবে কক্সবাজারগামী ১টি মোটর সাইকেলকে চ্যালেঞ্জ করলে মোটর সাইকেলে থাকা আরোহীগণ বিজিবি টহল দলকে লক্ষ্য করে এলোপাতাড়ি গুলি বর্ষণ করতে থাকে।

তখন বিজিবিও জান-মাল, অস্ত্র ও গোলাবারুদ রক্ষার্থে গুলি ছুড়ে, উভয় পক্ষের গোগোলাগুলিতে এক ইয়াবা ব্যবসায়ী গুলিবিদ্ধ হয়। পরে স্থানীয়দের সহযোগিতায় তাকে হাসপাতালে নিয়ে আসলে কর্তব্যরত ডাক্তার মৃত ঘোষনা করেন।

পরে জানা যায়, সে উখিয়া কুতুপালং ক্যাম্প-৭ ব্লক-ই-১ এর আশ্রিত রোহিঙ্গা মোহাম্মদ আলীর ছেলে মোঃ আইয়ুব (২২)। মিয়ানমারের আকিয়াব জেলার মংডু থানার বাসিন্দা। এসময় তার নিকট থেকে ১টি দেশীয় তৈরী বন্দুক, ২ রাউন্ড খালি কার্তুজ এবং ২৯৫০পিস ইয়াবা উদ্ধার করা হয়।

উখিয়া থানার অফিসার ইনচার্জ আবুল মনসুর জানান, লাশটি ময়না তদন্তের জন্য কক্সবাজার মর্গে প্রেরণ করা হয়েছে।

এদিকে ৫ই আগস্ট বিকাল ৫টার সময় মহেশখালী উপজেলার শাপলাপুর ইউনিয়নের মৌলভীকাটা এলাকায় বজ্রপাতের আঘাতে দুই শিশিুর মর্মান্তিক মৃত্যু হয়। গুরুতর আহত হয়েছে আরো একজন।

নিহতরা হল- ওই এলাকার সরওয়ার কামালের পুত্র ওসমান গণি (১৩) ও আবদুল জব্বারের মেয়ে সাদিয়া আকতার (১২)। আহত হয়েছে সাদিয়ার ছোটবোন সায়মা আকতার (১০)।

ইউপি সদস্য মো: হোসেন বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, গ্রামের পাশের পরিত্যক্ত ধান জমিতে ছাগল চরাচ্ছিল ওসমান গণি। তার পাশে খেলছিল সাদিয়া ও তার বোন সায়মা। এর মধ্যে আকস্মিকভাবে বজ্রপাত হলে তিনজনই আক্রান্ত হয়।

এর মধ্যে ঘটনাস্থলেই মারা যায় সাদিয়া ও ওসমান গণি এবং মারাত্মকভাবে আহত হয় সায়মা। তাকে উদ্ধার মুর্মূর্ষু অবস্থায় মহেশখালী সদর হাসপাতালে নেয়া হয়েছে।

অপরদিকে ৫ই আগসবট সোমবার বিকাল চারটার দিকে চকরিয়া পৌরসভার ৩নম্বর ওয়ার্ডের ফুলতলা স্বপ্নপুরী ক্লাবের সামনে একটি পুকুরে হাত-মুখ পরিস্কার করতে গিয়ে চার ছাত্রী পুকুরের পানিতে তলিয়ে যায়।

এসময় তিনজনকে জীবিত উদ্ধার করলেও ফুলতলাস্থ এসকে পাড়া গ্রামের মহিউদ্দিনের বড়মেয়ে তাসমিনের মৃত্যু করুন হয়। সে স্থানীয় বাটাখালী ২য় সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণিতে অধ্যায়নরত ছিল। তাসমিনের মৃত্যু ঘটনায় পরিবারে চলছে শোকের মাতম। এলাকায় নেমে এসেছে শোকের ছায়া।

শিক্ষার্থী তাসমিনের মামা জাহাংগীর মন্সী বলেন, সোমবার ছিল তাসমিনের স্কুলে বাংলা (২য় সাময়িক) পরীক্ষা। বিকালে পরীক্ষা শেষ করে বাড়িতে আসার পথে স্থানীয় ডা. ছরওয়ারের পুকুরে হাত-মুখ ধুতে নামেন তাসমিনসহ আরো চার ছাত্রী। ওইসময় হঠাৎ করে পুকুরে পড়ে যায় তাসমিন। তাকে উদ্ধারে চেষ্ঠা করে অপর তিন শিক্ষার্থীও পানিতে তলিয়ে যায়।

তিনি বলেন, ঘটনার সময় শিক্ষার্থীদের চিৎকার শুনে পাশের বাড়ির লোকজন ছুটে গিয়ে পুকুর থেকে তাদেরকে উদ্ধার করেন। এসময় তিনজনকে জীবিত উদ্ধার করা সম্ভব হলেও ততক্ষনে মৃত্যুর কাছে পরাজিত হন শিক্ষার্থী তাহসিন। ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন চকরিয়া পৌরসভার মেয়র বশিরুল আইয়ুব।

এছাড়া ৫ আগষ্ট সোমবার দুপুর ২টার দিকে কক্সবাজার সদরের ইসলামপুরে লবন মিলে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে বশির আহমদ নামে এক শ্রমিকের মৃত্যু হয়েছে।

নিহত বশির আহমদ খুটাখালী জনগর পাড়া এলাকার মোহাম্মদ হোসেনের ছেলে বলে জানা গেছে।তার এক স্ত্রী ও তিন সন্তানের জনক বলে জানান স্থানীয়রা।

স্থানীয় ওয়ার্ড মেম্বার জানান, নিহত বশির আহমদ প্রতিদিনের ন্যায় ঐ লবন মিলে কাজ করছিল। এ সময় অসাবধনতা অবস্থায় বৈদ্যতিক তার বশিরের শরীরে লেগে গেলে মাটিতে লুটে পড়ে। দ্রুত উদ্ধার পুর্বক ঈদগাঁওস্থ একটি বেসরকারি ক্লিনিকে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

ঈদগাঁও তদন্ত কেন্দ্রের এসআই সনজিত চন্দ্র নাথ হাসপাতালে গিয়ে মৃতদেহের সুরহতাল রিপোর্ট তৈরি করে ময়না তদন্তের জন্য সদর হাসপাতালের মর্গে প্রেরণ করেন।